কিছু প্রশ্ন করছি, নিজের বাসার জন্য কত টন এসি কিনতে চান?
১ টন, ১.৫ টন নাকি ২ টন?
ছোট কিংবা বড় আকারের রুমের জন্য কত টন এসি ব্যবহার করলে ভালো?
৯০% ব্যবহারকারী আসলে সঠিক উত্তর দিতে পারবেন না! আসলে এটাই বাস্তবতা, আমরাও স্বীকার করে নিচ্ছি। তবে আপনি যদি স্মার্ট হন তাহলে অবশ্যই এসির টন বলতে কি বোঝায় সেই সম্পর্কে জেনে নিবেন। আমরা যারাই বাসায় এসি ব্যবহার করি না কেন, রুমের আয়তন এর ভিত্তি করে সঠিক টনের এসি নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ।
কেননা, যদি অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের রুমের জন্য বেশী টন এর এসি ব্যবহার করেন তাহলে এসি কার্যকারিতা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকবে এবং অন্যদিকে, বড় আকারের রুমের জন্য অপেক্ষাকৃত কম টনের এসি ব্যবহার করলে মাস শেষের বিদ্যুৎ বিল দেখে এসি খুলে ফেলার ইচ্ছাও হতে পারে।
যারা বাসায় এসি ব্যবহার করে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল এর সম্মুখীন হচ্ছেন তাদের জন্য আমাদের কিছু পরামর্শ রয়েছে যা একটি আর্টিকেল হিসাবে আমরা ইতিমধ্যেই প্রদান করেছি। অনুগ্রহ করে এসির বিদ্যুৎ বিল কমিয়ে আনার উপায় আর্টিকেলটি পড়ে নিতে পারেন।
আপনি কি জানেন এসির ক্ষেত্রে “টন” বলতে কি বোঝায়? আমরা কিন্তু ট্র্যাকের গায়ে লিখা থাকে “সমগ্র বাংলাদেশ ৫টন” সেই টন এর কথা বলছি না! টন মুলত ওজন পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হলেও রেফ্রিজারেশন ইন্ডাস্ট্রিতে এর অর্থ সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এসিতে ব্যবহৃত টন
তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এসিতে যেই টন এর উল্লেখ থাকে সেটি বলতে কি বোঝায়?
এসির ক্ষেত্রে “টন” শব্দটি – একটি রুম থেকে প্রতি ঘন্টায় কি পরিমান তাপ (গরম বাতাস) অপসারণ করতে সক্ষম সেটি বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এখন কি পরিমান তাপ অপসারণ করতে হবে সেটি পরিমাপ করার একক হচ্ছে British Thermal Unit যা সংক্ষেপে BTU নামে পরিচিত।
যেমন বলা যায়, একটি ১টন এসি প্রতি ঘণ্টায় 12,000 BTU পরিমান গরম বাতাস অপসারণ করতে সক্ষম। অন্যদিকে, যদি ৪টন এসির ক্ষেত্রে গরম বাতাস অপসারণ করার সক্ষমতা হবে 12,000*4 = 48000 BTU. অর্থাৎ, এসির সক্ষমতা (টন) যত বেশী হবে সেটি তত বেশী পরিমান গরম বাতাস অপসারণ করতে পারবে।
টন এর কাজ বুঝলেন, তাহলে এখন আপনার জন্য কত টন এর এসি প্রয়োজন সেটি বুঝবেন কি করে?
বেশীরভাগ ক্ষেত্রে বাসা কিংবা অফিস এর জন্য যদি এসি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন তাহলে সেই রুমের (যেই রুমে এসিটি ইন্সটল করা হবে) আকার (স্কয়ার ফিট হিসাবে), রুমের মেঝে থেকে সিলিং এর দূরত্ব, দরজা – জানালার সংখ্যা, রুমে সূর্যের আলো প্রবেশ করার মাত্রা ইত্যাদি বিষয়গুলো সঠিকভাবে নির্ধারণ করে তারপর আপনার জন্য সঠিক টন এর এসি নির্বাচন করতে হবে।
বিষয়টি আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলেও এসির কার্যকারিতা এবং ভবিষ্যৎ বিদ্যুৎ বিল এর কথা চিন্তা করে হলেও এসি ক্রয় করার পূর্বে আপনার রুমের জন্য সঠিক টন হিসাব করে বের করে নিতে হবে। অন্যথায়, পরে আপনাকে আফসোসও করতে হতে পারে।
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে টন কিভাবে ক্যালকুলেট করবেন?
টন ক্যালকুলেশন পদ্ধতি
মজার বিষয় হচ্ছে, টন হিসাব করার এই সূত্রটি মুলত আবিষ্কার করা হয় ১৯ শতকে যেখানে বরফ উৎপাদন পরিমাপ করার জন্য এটি ব্যবহৃত হত। শীতের মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্রের হাডসন নদীতে সৃষ্ট বরফ গলার জন্য প্রতি ২৪ ঘন্টার হিসাবে কি পরিমান তাপ এর প্রয়োজন হয় সেটি নির্ণয় করার জন্য এই টন ব্যবহৃত হত। সময়ের বিবর্তন এবং বিজ্ঞানের আশীর্বাদের কারনে এই টনকে, BTU এর হিসাবে এখন এয়ার কন্ডিশনার এর জন্য ব্যবহার করা হয়।
অনেকেই মনে করেন, প্রখ্যাত আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার Willis Carrier যাকে আধুনিক এয়ার কন্ডিশনার এর জনক বলা হয় তিনি, ১৯০২ সালে প্রথম এই “টন” শব্দটি ব্যবহার করেন। এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন সরাসরি উইকিপিডিয়া থেকে – https://en.wikipedia.org/wiki/Ton_of_refrigeration
এসির টন বলতে কি বুঝায়?
এসির টন সম্পর্কে জানার আগে জানতে হবে টন অব রেফ্রিজারেশন কি?
০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ২৪ ঘন্টায় ১ টন বরফ গলতে যে পরিমান তাপ গ্রহন করে, সেটিকে বলা হয়
“টন অব রেফ্রিজারেশন।”
এসির টন হলো একটি এসির ঠান্ডা করার ক্ষমতা অর্থাৎ, একটি এসি একটি নির্দিষ্ট সময়ে রুমকে কি পরিমান ঠান্ডা করবে সেটি বুঝানো হয়। এসির টন পরিমাপের জন্য তিনটি একক ব্যবহৃত হয় : BTU/hr, Kw/hr, kcl/hr
এখানে,
১ টন = ১২,০০০ বি টি ইউ/ আওয়ার = ৩.৫১৬৮৫ কিলো ওয়াট/ আওয়ার = ৩০২৩.৯৫ কিলো ক্যালরি/ আওয়ার
অর্থাৎ, যদি একটি রুম কিংবা কক্ষ থেকে একটি এসি ১ ঘন্টায় ১২,০০০ বি টি ইউ কিংবা ৩.৫১৬৮৫ কিলো ওয়াট তাপ (গরম বাতাস) অপসারন বা শোষণ করে তাহলে এসিটির ঠান্ডা করার ক্ষমতা হচ্ছে ১ টন।
অর্থাৎ, এসিটি এক টনের। এই সূত্রের উপর ভিত্তি করেই সকল এসির টন নির্ধারন করা হয়।
সঠিক টনের এসি নির্বাচন
এরিয়া মেথড:
একটি রুমের জন্য কত টনের এসির প্রয়োজন সেটি বের করার সহজ উপায় হলো এই এরিয়া মেথড। এই পদ্ধতিতে রুমের দৈর্ঘ্য-প্রস্থকে একসাথে গুন করে ১০০ দ্বারা ভাগ করলে কত টনের এসি প্রয়োজন সেটি হিসেব করে নেয়া যাবে।
উদাহরনস্বরুপ:
যদি একটি রুমের দৈর্ঘ্য ১৫ ফিট এবং প্রস্থ ১০ ফিট হয় তবে,
= (দৈর্ঘ্য × প্রস্থ) ÷ ১০০
= (১৫ × ১০) ÷ ১০০
= ১৫০ ÷ ১০০
= ১.৫
অর্থাৎ, এই রুমের জন্য ১.৫ টনের এসির প্রয়োজন।
ভলিয়ম মেথড:
একটি রুমের জন্য কত টনের এসির প্রয়োজন সেটি বের করার আরেকটি উপায় হলো ভলিয়ম মেথড। এই পদ্ধতিতে রুমের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতার ভ্যালু গুলোকে একসাথে গুন করে ১০০০ দ্বারা ভাগ করলে কত টনের এসি প্রয়োজন সেটি হিসেব করে নেয়া যাবে।
উদাহরনস্বরুপ:
যদি একটি রুমের দৈর্ঘ্য ২০ ফিট, প্রস্থ ১০ ফিট এবং উচ্চতা ১০ ফিট হয় তবে,
= (দৈর্ঘ্য × প্রস্থ × উচ্চতা) ÷ ১০০০ = (২০ × ১০ × ১০) ÷ ১০০০ = ২০০০ ÷ ১০০০ = ২ অর্থাৎ, এই রুমের জন্য ২ টনের এসির প্রয়োজন।
বিঃদ্রঃ রুমের পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন ফ্যাক্টর এর কারনে টনের এই হিসাবটি কমবেশি হতে পারে।
আশা করছি, উপরের এই হিসাবের মাধ্যমে নিজ রুমের জন্য কত টনের এসি ব্যবহার করতে হবে সেটি নিশ্চয় বের করে নিতে পারবেন। তারপরও যদি কোনও সমস্যার সম্মুখীন হন তাহলে sebokbd.com এর অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান রয়েছেন পরামর্শক হিসাবে। আপনার এসি ক্রয় করা থেকে শুরু করে সার্ভিসিং সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় যোগাযোগ করতে পারেন সাপোর্ট হটলাইনে– (+88) 01400414703-04 কিংবা ইমেইল এর মাধ্যমেও জানাতে পারেন – info@sebokbd.com
সঠিক টন নির্ণয়ের প্রয়োজনীয়তা
বাস্তবিক অর্থে বেশীরভাগ ব্যবহারকারীই এই টন সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনে এবং না বুঝেই এসি কিনতে চলে যান এবং ব্র্যান্ড-শপগুলো, আপনাকে অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বেশী টন এর এসি ধরিয়ে দিতে পারলেই তাদের লাভ।
কেননা, এসির টন যত বেশী দামও ততবেশী অর্থাৎ, দোকানীর প্রফিটও ততবেশী।
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, এই আর্টিকেল থেকে টন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পরও কি আপনি দোকানীর কথা মতন এসি নির্বাচন করবেন? কেননা রুমের তুলনায় বেশী ক্ষমতার (টন) এসি আপনার জন্য সমস্যার কারন হতে পারে। চলুন কিছুটা জেনে নেয়া যাকঃ
- অর্থ সাশ্রয়ঃ বেশী টন মানেই হচ্ছে বেশী খরচ! যেখানে ১ টন এর এসি আপনার জন্য প্রয়োজন, আপনি যদি ১.৫ টনের এসি কিনতে যান তাহলে ব্র্যান্ড ভেদে ৪০-৫০% বেশী অর্থ খরচ করতে হবে যেটির কোনও যৌক্তিকতা আছে বলে আমাদের মনে হয়না।
- এসির স্থায়িত্ব বৃদ্ধিঃ এসির মুল কাজ হচ্ছে শীতল বাতাস প্রদান করা। এখন অপেক্ষাকৃত ছোট রুমের জন্য যদি বেশী টন এর এসি ব্যবহার করেন তাহলে প্রায় তাৎক্ষনিক রুম ঠাণ্ডা হবে ঠিকই কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার করার সাথে সাথে এসির কার্যকারিতা হ্রাস পেতে থাকবে। কারন, এসিটি তখন নিজ সক্ষমতার তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম কাজ করবে যেটি ধীরে ধীরে এসির ক্ষমতা কমিয়ে আনতে থাকবে। অন্যদিকে, যদি এসির টন কম হয় তাহলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এসিটিকে অনেক শক্তি ব্যবহার করতে হবে। এতে করে রুম ঠাণ্ডা হতে সময় লাগবে বেশী এবং সক্ষমতার সম্পূর্ণ ব্যবহার করার কারনে এসির স্থায়িত্বও ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকবে।
- অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলঃ বেশী টন এর এসির অর্থ হচ্ছে, বেশী শক্তিশালী কমপ্রেসর। আমরা সবাই জানি মুলত কমপ্রেসরই এসির বিভিন্ন যন্ত্রাংশের মধ্যে সবথেকে বেশী পরিমান বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে। অর্থাৎ, আপনার মাসিক বিদ্যুৎ বিল এর উপর বড়সড় একটি প্রভাব ফেলবে যার ফলে অযথাই আপনাকে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল প্রদান করতে হবে। অন্যদিকে, রুমের তুলনায় এসির সক্ষমতা কম হয় তাহলে, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এসিটিকে অতিরিক্ত মাত্রায় বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করতে হবে যার ফলে মাস শেষে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিল এর সম্মুখীন হতে পারেন।
- স্বাস্থ্যগত ইস্যুঃ এসি ব্যবহার করার ফলে রুমের আর্দ্রতার পরিমান বেশী থাকে। এখন যদি সঠিক টনের এসি ব্যবহার না করে যদি বেশীর টন এর এসি ব্যবহৃত হয় তাহলে আর্দ্রতার পরিমান হবে আরও বেশী যেটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারন হতে পারে। অন্যদিকে, যদি রুমের তুলনায় এসির আকার ছোট হয় তাহলে আর্দ্রতার পরিমান হবে অনেক কম এবং এটিও আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ।
আশা করছি, আর্টিকেলটি আপনার ভাল লেগেছে। যদি এই আর্টিকেল সম্পর্কিত কোনও প্রশ্ন কিংবা মতামত জানাতে চান তাহলে অনুগ্রহ করে নিচের কমেন্ট সেকশনে সেটি জানাতে পারেন। আমরা চেষ্টা করবো আপনাকে সর্বাত্মক সহায়তা করার।
[…] জন্য ১ টন এর এসি পারফেক্ট হলেও ভবিষ্যতের কথা […]
[…] ভুল সাইজ (টন) এর এসি নির্বাচন, সঠিকভাবে […]