আমরা ইতিমধ্যেই বেশী কিছু প্রযুক্তির এসির সাথে আপনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। যেমন ধরুন, নন-ইনভার্টার এসি, ইনভার্টার এসি, ডুয়েল-ইনভার্টার এসি ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরনের এই এসিগুলোর সুবিধা-অসুবিধা সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি চাইলে উপরের লিংকগুলো ক্লিক করে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে পারেন।
“ট্রিপল ইনভার্টার এসি” নাম শুনে কি মনে হচ্ছে? এসির মধ্যে ৩ টি ইনভার্টার থাকবে কিংবা ট্রিপল-রোটারি কমপ্রেসর থাকবে ইত্যাদি! আসলে তেমন কিছুই নয়। আজকের আর্টিকেলে আমরা ট্রিপল-ইনভার্টার এসি এবং এটি ব্যবহারের কিছু সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
পরিচিতি
সেই ১৯০২ সালে এয়ার কন্ডিশনার কিংবা এসি উদ্ভাবনের পর থেকে এখন পর্যন্ত এসির কাজ করার প্রক্রিয়া একইরকমের রয়েছে। তবে সময় এবং নদী কোনটাই যেহেতু থেমে থাকেনা সেই হিসাবে সময়ের সাথে সাথে এসিতে ব্যবহৃত প্রযুক্তিতে এসেছে পরিবর্তন। সেই পরিবর্তনগুলোর বিচারে আমরা এসিকে প্রধানত দুইটি ভাগে বিভক্ত করতে পারি।
- নন-ইনভার্টার এসি (সনাতন পদ্ধতির এসি), এবং
- ইনভার্টার এসি (আধুনিক পদ্ধতির এসি)
তবে ইনভার্টার প্রযুক্তির এসিগুলোতে আবার কিছু পরিবর্তন এর মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে –
- ডুয়েল-ইনভার্টার এসি, এবং
- ট্রিপল-ইনভার্টার এসি
অর্থাৎ, উপরের উল্লেখিত ডুয়েল এবং ট্রিপল ইনভার্টার এসি হচ্ছে সাধারণ ইনভার্টার এসির আপডেটে সংস্করণ।
ইনভার্টার এসি সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যেই বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তাই আজকের আর্টিকেলে ইনভার্টার প্রযুক্তি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবোনা। তবে আমাদের পরামর্শ থাকবে, ট্রিপল-ইনভার্টার প্রযুক্তি সম্পর্কে ভালো করে বোঝার জন্য অনুগ্রহ করে ইনভার্টার এসি এবং ডুয়েল-ইনভার্টার এসি এই আর্টিকেল দুইটির বিস্তারিত তথ্যগুলো পড়ে নিবেন।
ট্রিপল-ইনভার্টার প্রযুক্তি এবং এর কাঠামো
ডুয়েল-ইনভার্টার প্রযুক্তির এসিতে বিদ্যমান কমপ্রেসরে ব্যবহৃত হয় টুইন-রোটারি কমপ্রেসর সে হিসাবে ট্রিপল-ইনভার্টার এসিতে “ট্রিপল-রোটারি কমপ্রেসর ব্যবহৃত হবে সেটি কিন্তু নয়।
ট্রিপল ইনভার্টার প্রযুক্তির এসিতে যেই কমপ্রেসর ব্যবহৃত হয় সেটিতে বিদ্যমান ইলেকট্রিক মোটরটি ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। ট্রিপল-ইনভার্টার প্রযুক্তির এসিতে ব্যবহৃত কমপ্রেসরে ব্যবহৃত হয় ৮-পোলের ইলেকট্রিক মোটর যেখানে সাধারণ ইনভার্টার এসিগুলোতে ব্যবহৃত হয় ৪-পোলের মোটর।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন হতে পারে, মোটরে ব্যবহৃত এই পোল (Pole) বলতে কি বোঝায়? আপনি হয়ত নিশ্চয়ই জানেন, ইলেকট্রিক মোটর এর মধ্যে থাকে ম্যাগনেট কিংবা বাংলাতে যদি বলি তাহলে চৌম্বক। এই ম্যাগনেটগুলো, মোটর এর মধ্যে বিদ্যমান শ্যাফট এর চারপাশে বসানো থাকে।
৪ পোলের মোটর এর অর্থ হচ্ছে এর মধ্যে থাকে ৪টি ম্যাগনেট অন্যদিকে, ৮ পোলের মোটর এর অর্থ হচ্ছে এর মধ্যে ৮টি ম্যাগনেট কিংবা চৌম্বক বিদ্যমান থাকে। এই ম্যাগনেট এর আকর্ষণ এর কারনে মোটরের মধ্যে থাকা শ্যাফট ঘুরতে থাকে।
যখন মোটরটি কাজ করতে থাকে তখন ম্যাগনেট এর মধ্যে অবস্থিত শ্যাফটটি ঘুরতে থাকে। ৪-পোলের মোটরের মধ্যে থাকা শ্যাফট, ঘূর্ণয়ন এর গতিকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা যার কারনে ঘূর্ণয়ন গতির উঠানামা করতে থাকে। যেখানে, ৮-পোলের মোটরটি উৎপাদিত এই ঘূর্ণয়ন শক্তির ব্যালেন্স বজায় রাখতে পারে।
এই মোটরে বিদ্যমান অতিরিক্ত ৪টি-পোল মূলত ঘূর্ণয়ন ভরের ভারসাম্য ধরে রাখে যার কারনে কম্পন (vibration) হয়না। অর্থাৎ, সহজ কথায় যদি বলি, এসিতে থাকা কম্প্রেসর নিঃশব্দে আপনাকে ঠাণ্ডা বাতাস প্রদান করতে থাকবে।
ট্রিপল-ইনভার্টার এসিতে থাকা কমপ্রেসরটি হচ্ছে মূলত ডিজিটাল-ইনভার্টার প্রযুক্তির, যেটির উদ্ভাবক হচ্ছে বিখ্যাত কোরিয়ান ব্র্যান্ড স্যামসাং। ২০১৯ সালে উদ্ভাবনের পর থেকেই স্যামসাং, তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন রেফ্রিজারেশন এপ্লায়েন্স যেমন এসি এবং ফ্রিজের ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তির কমপ্রেসর ব্যবহার করে আসছে।
আমাদের দেশে এই কমপ্রেসর এর ব্যবহার এখন পর্যন্ত তেমন না হলেও ধরে নিচ্ছি খুব শীঘ্রই এসি এবং ফ্রিজের ক্ষেত্রে এই ডিজিটাল ইনভার্টার প্রযুক্তির কমপ্রেসর এর ব্যবহার দেখতে পাবো। ডিজিটাল ইনভার্টার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন “ডিজিটাল ইনভার্টার কমপ্রেসর” আর্টিকেল থেকে। অনুগ্রহ করে আর্টিকেলটি পড়ে নেয়ার পরামর্শ থাকছে।
সুবিধাসমুহ
আর্টিকেল এর শুরুতেই বলেছি, সাধারণ ইনভার্টার এসির একটি বিশেষায়িত সংস্করণ হচ্ছে ট্রিপল ইনভার্টার প্রযুক্তি। ইনভার্টার এসির সকল সুবিধাসহ ট্রিপল ইনভার্টার এসিতে আরও কিছু অতিরিক্ত ফিচার রয়েছে যা এখন আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ঃ সাধারণ ইনভার্টার এবং ডুয়েল-ইনভার্টার এসিতে ব্যবহৃত হয় ৪-পোলের ব্রাশলেস ডিসি কারেন্ট মোটর (BLDC) যেখানে ট্রিপল-ইনভার্টারে ব্যবহৃত হয় ৮-পোলের ইলেকট্রিক মোটর। এই মোটর, আগের জেনারেশনগুলোর মোটর এর থাকে অনেকবেশী বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।
শব্দবিহীন এবং কম্পন ফ্রিঃ কমপ্রেসরে ৮-পোলের মোটর থাকার কারনে ঘূর্ণয়ন এর সময় মোটরে বিদ্যমান শ্যাফট এর চারিদকে ঘূর্ণয়নভর সঠিক পরিমাপে থাকে যার কারনে কমপ্রেসরের মধ্যে অতিরিক্ত কোনও কম্পনের সৃষ্টি হয়না। যেহেতু কম্পন হয়না তাই কমপ্রেসর কাজ করার সময় কোনও শব্দের সৃষ্টি করেনা।
দীর্ঘস্থায়ীঃ কমপ্রেসরের মধ্যে অতিরিক্ত কোনও কম্পন না থাকার কারনে এর স্থায়িত্বও অনেক বেশী থাকে। স্যামসাং এর উৎপাদিত কমপ্রেসরগুলোকে জার্মান সার্টিফাইড অথোরিটি VDE (Verband Deutscher Elektrotechnicker) ১২০ দিন ধরে প্রায় ৩০০,০০০ বার পরীক্ষা করে সার্টিফিকেট প্রদান করেছে। যেখানে স্থায়িত্ব হিসাবে বলা হয়েছে প্রায় ২১ বছর পর্যন্ত এই কমপ্রেসরগুলো সফলভাবে কাজ করতে সক্ষম। সুতরাং, এই কমপ্রেসরের এসি কিংবা ফ্রিজগুলো দীর্ঘদিন পর্যন্ত সেবা প্রদানে সক্ষম।
দ্রুত শীতলীকরণঃ সাধারণ মানের অর্থাৎ, নন-ইনভার্টার এসির তুলনায় ট্রিপল-ইনভার্টার এসি ৬৭% দ্রুত গতিতে রুমকে ঠাণ্ডা করতে সক্ষম। দ্রুত ঠাণ্ডা করার সাথে সাথে এই এসি অপেক্ষাকৃত ৬৫% পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারে।
সর্বাধুনিক প্রযুক্তিঃ ২০১৯ সালে স্যামসাং এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে নিজেদের এসি এবং ফ্রিজে ব্যবহার করে আসছে। তবে ইতিমধ্যেই অন্যান্য আরও কিছু ব্র্যান্ড যেমন স্যানসুই এবং হায়ার, স্যামসাং এর এই ট্রিপল ইনভার্টার প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের জন্য রেফ্রিজারেশন এপ্লায়েন্স উৎপাদন করছে।
আশা করছি, আর্টিকেলটি আপনার ভাল লেগেছে। যদি এই আর্টিকেল সম্পর্কিত কোনও প্রশ্ন কিংবা মতামত জানাতে চান তাহলে অনুগ্রহ করে নিচের কমেন্ট সেকশনে সেটি জানাতে পারেন। আমরা চেষ্টা করবো আপনাকে সর্বাত্মক সহায়তা করার।
[…] ট্রিপল-ইনভার্টার প্রযুক্তির ব্যবহার […]