প্ল্যাজমাক্লাস্টার কি? এর সুবিধা সমুহ কি কি?

0
121

বর্তমানে আমরা যেই ধরনের এসি ব্যবহার করছি সেটির মুল ধারনা আসে ১৯০২ সালে। প্রখ্যাত আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার Willis Carrier সর্বপ্রথম এয়ার কন্ডিশনার এর প্রবর্তন শুরু করেন যার কারনে তাকে বলা হয় আধুনিক এয়ার কন্ডিশনার এর জনক।

সেই ১৯০২ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যেই প্রক্রিয়ায় এসি, শীতলীকরণ এর কাজটি সম্পাদন করে আসছিল সেটি সম্পূর্ণরূপে একই আছে তবে পরিবর্তন এসেছে প্রযুক্তিতে। বর্তমানে আমরা যেই এসিগুলো বাসা কিংবা অফিসে ব্যবহার করি সেগুলোতে যুক্ত হয়েছে নিত্য-নতুন বিভিন্ন ফিচার যাদের মধ্যে “প্ল্যাজমাক্লাস্টার” অন্যতম।

আজকের আর্টিকেলে আমরা প্ল্যাজমাক্লাস্টার সম্পর্কে জানবো এবং এটি কি, কিভাবে কাজ করে, ব্যবহার করার কারণে গ্রাহক কি কি সুবিধাগুলো পাবেন সে সম্পর্কে আলোচনা করবো।

প্ল্যাজমাক্লাস্টার পরিচিতি

আমরা যেই বাতাস নিঃশ্বাস এর সাথে গ্রহন করি সেটির মাধ্যমে মুলত অক্সিজেন গ্রহন করি যা আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাস এর মুল উপাদান। বিষয়টি আমরা সবাই জানি। এখন যদি ভাল মানের অক্সিজেন এর পরিবর্তে দূষিত অক্সিজেন গ্রহন করেন তাহলে কি হবে?

কি হতে পারে সেটি নিয়ে বলার কিছুই নেই! এখন কি করলে এই দূষিত বায়ু থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সেটিই হচ্ছে বিবেচনার বিষয়। প্ল্যাজমাক্লাস্টার মুলত বাতাসের মধ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন দূষিত পদার্থ শোষণ করার জন্য Air Purifier এর মধ্যে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এয়ার-পিউরিফায়ার নিয়ে অন্য কোনও আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করবো। সেই পর্যন্ত মনে রাখুন, এয়ার-পিউরিফায়ার হচ্ছে এমন এক ধরনের যন্ত্র, যেটির কাজ হচ্ছে বাতাস থেকে সকল ধরনের দূষিত পদার্থ যেমন ক্ষুদ্র ধূলিকণা, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া শোষণ করে বিশুদ্ধ বাতাস প্রদান করা।

প্ল্যাজমাক্লাস্টার হচ্ছে বাতাসকে দূষণমুক্ত করার জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এতিদিন পর্যন্ত এই প্রযুক্তিটি শুধুমাত্র এয়ার-পিউরিফিকেশন সিস্টেমে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে বিখ্যাত ব্র্যান্ড “Sharp“, তাদের এসিগুলোতে ব্যবহার করছে যাতে করে আপনি দূষণমুক্ত ঠাণ্ডা বাতাস পেতে পারেন।

তৈরির প্রক্রিয়া

প্রাকৃতিকভাবে আমাদের চারপাশে বাতাসের মধ্যে দুই ধরনের আয়ন বিদ্যমান থাকে। এদের মধ্যে একটি হচ্ছে পজিটিভ হাইড্রোজেন আয়ন এবং অন্যটি হচ্ছে নেগেটিভ অক্সিজেন আয়ন। এই দুইটি আয়ন মুলত পানির কনা এবং অক্সিজেন এর মাধ্যমে তৈরি হতে থাকে।

প্ল্যাজমাক্লাস্টার প্রযুক্তির এসিগুলো প্রাকৃতিক উপায়ে নির্মিত এই পজিটিভ হাইড্রোজেন আয়ন (H⁺) এবং নেগেটিভ অক্সিজেন আয়ন (O₂⁻) তৈরি করতে সক্ষম। তবে এই আয়ন তৈরি করার প্রক্রিয়াটি কিছুটা ভিন্ন।

এসি মুলত যেই প্রক্রিয়া ব্যবহার করে এই আয়ন তৈরি করে সেটিকে বলা হয় প্ল্যাজমা ডিসচার্জ। Sharp তাদের এসিগুলোতে এই আয়ন তৈরি করার জন্য প্ল্যাজমা ডিসচার্জ সিস্টেম ব্যবহার শুরু করে যেটির মাধ্যমে পানিকে-পজিটিভ চার্জ এবং অক্সিজেনকে- নেগেটিভ চার্জ প্রদান করে। এই প্ল্যাজমা ডিসচার্জ এর মাধ্যমে ভোল্টেজ ইলেক্ট্রোড ব্যবহার করার মাধ্যমে বাতাসের মধ্যে বিদ্যমান পানি এবং অক্সিজেন থেকে পজিটিভ হাইড্রোজেন আয়ন (H⁺) এবং নেগেটিভ অক্সিজেন আয়ন (O₂⁻) তৈরি করতে থাকে।

এই পজিটিভ হাইড্রোজেন আয়ন (H⁺) এবং নেগেটিভ অক্সিজেন আয়ন (O₂⁻)  এর মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল চার্জ বিদ্যমান থাকে। এই ইলেকট্রিক চার্জ মুলত বাতাসে জলের অণুগুলিকে আকর্ষণ করে (H₂O), যা আয়নগুলিকে ঘিরে থাকে এবং স্থিতিশীল ক্লাস্টার আয়ন গঠন করে।

কার্যপ্রণালী

পজিটিভ হাইড্রোজেন আয়ন (H⁺) এবং নেগেটিভ অক্সিজেন আয়ন (O₂⁻) একসাথে মিলিত হয়ে একটি প্ল্যাজমাক্লাস্টার আয়ন বন্ড তৈরি করে যেটি বাতাসের মধ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার উপরিভাগে অবস্থান করে নিজেদের চার্জগুলোর পরিবর্তন ঘটিয়ে OH radicals তৈরি করে।

তাদের অত্যন্ত শক্তিশালী অক্সিডাইজিং ক্ষমতার সাথে, OH radicals গুলো ভাইরাস এবং অন্যান্য পদার্থের উপরিভাগে অবস্থিত প্রোটিন থেকে দ্রুত হাইড্রোজেন (H) আহরণ করে। এইকারনে প্রোটিনের স্তরটি পচে যায় এবং ভাইরাসের কার্যকারিতাকে নষ্ট করে ফেলে।

ব্যাকটেরিয়া এবং অ্যালার্জেনের মতো জিনিসের পৃষ্ঠে (উপরিভাগে) প্রধানত প্রোটিনের একটি স্তর থাকে। প্রোটিনের এই স্তর থেকে যখন হাইড্রোজেন (H) গ্রহন করে নেয়া হয় তখন ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। OH radicals বন্ড তখন হাইড্রোজেন (H) পরমাণুগুলোকে বাতাসে বিদ্যমান অক্সিজেন (O₂) এর সাথে তাৎক্ষনিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে পানিতে (H₂O) রূপান্তরিত হয়ে পুনরায় বাতাসে ফিরে আসে।

চিন্তায় পরে গেলেন? বিষয়গুলো মাথার উপর দিয়ে গেছে মনে হয়। সমস্যা নেই, নিচের একটি সিমুলেশন ভিডিও রেফারেন্স হিসাবে আপনাদের প্রদান করছি যেটি দেখার মাধ্যমে কিছুটা হলেও প্ল্যাজমাক্লাস্টার প্রযুক্তির ধারনা পাবেন।

সুবিধাগুলো কি কি?

শুরুতেই বলেছি প্ল্যাজমাক্লাস্টার প্রযুক্তি মুলত এয়ার-পিউরিফায়ার যন্ত্রে ব্যবহৃত হতো। তবে Sharp ব্র্যান্ড এখন নিজ এসির জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে এতে করে গ্রাহক হিসাবে কিছু সুবিধা আপনি অবশ্যই পাবেন।

অর্থ সাশ্রয়ঃ ব্র্যান্ড ভেদে একটি পিউরিফায়ার এর দাম হচ্ছে ১৫,০০০-১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই পিউরিফায়ারগুলোর মুল কাজ হচ্ছে, আপনার রুমের মধ্যে বিদ্যমান বাতাসকে দূষণমুক্ত করা। যেহেতু প্ল্যাজমাক্লাস্টার প্রযুক্তিও একই কাজ করে সুতরাং, এই প্রযুক্তির এসি কিনে নিলেই একের মধ্যে দুই পেয়ে গেলেন। একদিকে এসি, ঠাণ্ডা বাতাস প্রদান করবে অন্যদিকে ঘরের ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়াগুলো ধ্বংস করে ফ্রেশ বাতাস প্রদান করবে। অর্থাৎ, অতিরিক্ত কোনও কিছু কেনার প্রয়োজন নেই।

ধূলা-ময়লা থেকে মুক্তিঃ প্ল্যাজমাক্লাস্টার প্রযুক্তির এসিগুলো বাতাস থেকে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার সাথে সাথে ক্ষুদ্রাকৃতির ধূলিকণা শোষণ করে নেয় যার ফলে রুমের মধ্যে ধূলা-ময়লার পরিমান অনেকাংশে হ্রাস পাবে।

সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করনঃ প্ল্যাজমাক্লাস্টার ডিসচার্জ এর মাধ্যমে যেহেতু বাতাসে বিদ্যমান ক্ষুদ্রাকৃতির ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াগুলো ধ্বংস হয়ে যায় এই কারনে রুমের মধ্যে ফ্রেশ বাতাস এর প্রবাহ বিদ্যমান থাকবে। এতে করে ঠাণ্ডা-জনিত বিভিন্ন রোগ যেমন, হাঁচি, কাশি, অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পাবেন যার মাধ্যমে আপনার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হবে বলে আশা করা যায়।


আশা করছি, আর্টিকেলটি আপনার ভাল লেগেছে। যদি এই আর্টিকেল সম্পর্কিত কোনও প্রশ্ন কিংবা মতামত জানাতে চান তাহলে অনুগ্রহ করে নিচের কমেন্ট সেকশনে সেটি জানাতে পারেন। আমরা চেষ্টা করবো আপনাকে সর্বাত্মক সহায়তা করার।

কমেন্ট সেকশন

Please enter your comment!
Please enter your name here