ডুয়েল এবং ট্রিপল ইনভার্টার এসির পার্থক্য

0
314
ডুয়েল ইনভার্টার বনাম ট্রিপল ইনভার্টার

ডুয়েল-ইনভার্টার এবং ট্রিপল-ইনভার্টার এসির বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। জেনেছি এই দুই ধরনের প্রযুক্তির বিস্তারিত সুবিধা এবং অসুবিধা সম্পর্কেও। তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ব্যবহারকারী হিসাবে আপনার জন্য দুইটির মধ্যে কোন ধরনের এসি ভাল হবে?

প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য প্রথমে এই দুই ধরনের এসির কিছুটা পার্থক্য দেখে নেয়া যেতে পারে। তাই আজকের আর্টিকেল এর বিষয় হচ্ছে, ডুয়েল-ইনভার্টার এবং ট্রিপল ইনভার্টার এসির মধ্যকার পার্থক্যগুলো নিয়ে। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।

পরিচিতি

এই দুই ধরনের এসির মধ্যকার পার্থক্য জানার পূর্বে অবশ্যই নিচের আর্টিকেলগুলো রেফারেন্স হিসাবে পড়ে নিবেন। এতে করে বিভিন্ন ধরনের এসির কাজ করার প্রক্রিয়া এবং এগুলো ব্যবহারের সুবিধা-অসুবিধাগুল জানতে পারেন যার মাধ্যমে এই আর্টিকেল এর আলোচ্য পার্থক্যগুলো বুঝতে আপনার সুবিধা হবে।

ডুয়েল কিংবা ট্রিপল ইনভার্টার হচ্ছে, সাধারণ ইনভার্টার প্রযুক্তির আপডেটেড সংস্করণ। অর্থাৎ, সরাসরি ইনভার্টার প্রযুক্তির সাথে ডুয়েল এবং ট্রিপল-ইনভার্টার এসির খুব বেশী পরিমাণ পার্থক্য না থাকলেও আপনি যদি নন-ইনভার্টার এসির সাথে তুলনা করেন তাহলে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন।

আমরা ইতিমধ্যেই ইনভার্টার এবং নন-ইনভার্টার এসির মধ্যকার পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করেছি। এই পার্থক্যটি থেকে মূলত বুঝতে পারবেন ইনভার্টার এবং নন-ইনভার্টার প্রযুক্তির মধ্যকার বিস্তারিত প্রযুক্তিগত পরিবর্তন সম্পর্কে।

শুরুতেই বলেছি,

“ডুয়েল ইনভার্টার এবং ট্রিপল-ইনভার্টার” আধুনিক প্রযুক্তির রেফ্রিজারেশনের কাজে ব্যবহৃত হলেও এই দুইটিই হচ্ছে সাধারণ ইনভার্টার প্রযুক্তির বিশেষায়িত দুইটি রূপ।

এই দুই ধরনের এসিতেই বেশ কিছু কমন সুবিধা রয়েছে, যেমন বিদ্যুৎ সাশ্রয়, স্বল্প শব্দ উৎপাদন, দ্রুত গতিতে শীতলীকরণ ইত্যাদি। তবে এদের সবথেকে বড় পার্থক্য হচ্ছে, ব্যবহৃত কমপ্রেসর প্রযুক্তিতে। ডুয়েল ইনভার্টার প্রযুক্তির কমপ্রেসরে যেখানে ৪-পোলের ইলেকট্রিক মোটর ব্যবহৃত হয় সেখানে ট্রিপল-ইনভার্টার প্রযুক্তির কমপ্রেসরে ব্যবহৃত হয় ৮-পোলের ইলেকট্রিক মোটর যা অপেক্ষাকৃত কম বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে দ্রুত গতিতে কাজ করতে সক্ষম।

পার্থক্যসমূহ একনজরে

নিচে টেবিল আকারে আমরা পার্থক্যগুলো দেখানোর চেষ্টা করেছি যার বিস্তারিত আমরা আর্টিকেলে আলচনা করবো। বোঝার সুবিধার জন্য অনুগ্রহ করে ভাল করে দেখে নিন।

ডুয়েল-ইনভার্টার এসি ট্রিপল-ইনভার্টার এসি
কমপ্রেসর এই এসিতে ব্যবহৃত হয় টুইন-রোটারি কমপ্রেসর যেটিতে ব্যবহৃত হয় ৪-পোলের ইলেকট্রিক মোটর যা সাধারণ ইনভার্টার এবং নন-ইনভার্টার কমপ্রেসর এর তুলনায় অধিক দ্রুত গতিতে কাজ করতে সক্ষম। এই এসিতে ব্যবহৃত হয় টুইন-রোটারি কমপ্রেসর যেটিতে ব্যবহৃত হয় ৮-পোলের ইলেকট্রিক মোটর যা ডুয়েল-ইনভার্টার প্রযুক্তির কমপ্রেসর এর তুলনায় অপেক্ষাকৃত দ্রুত গতিতে কাজ করতে সক্ষম।
শীতলীকরণ শক্তি এই এসিতে ব্যবহৃত ৪-পোলের BLDC মোটর ব্যবহৃত হয় যেটি প্রয়োজনের সময় অতিরিক্ত ঘূর্ণয়ন শক্তি গ্রহন করতে পারে এবং একই পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমে দুইটি ইম্পেলার অপেক্ষাকৃত দ্রুততার সাথে রুমের তাপমাত্রা ঠাণ্ডা করতে সক্ষম। এই এসিতে ব্যবহৃত ৮-পোলের BLDC মোটর ব্যবহৃত হয় যেটিতে বিদ্যমান অতিরিক্ত ৪-পোল, শীতলীকরণ কাজ করার সময় মোটরের ঘূর্ণয়ন শক্তির ব্যালেন্স বজায় রাখে এবং এই কারনে কমপ্রেসর অপেক্ষাকৃত দ্রুত গতিতে শীতলীকরণ কাজ করতে সক্ষম।
বিদ্যুৎ শক্তির ব্যবহার টুইন-রোটারি কমপ্রেসরে দুইটি ইম্পেলার থাকার কারনে সাধারণ কমপ্রেসর এর তুলনায় কম বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে একই পরিমানের ঠাণ্ডা বাতাস প্রদানে সক্ষম। যার ফলে, বিদ্যুৎ বিল এর বোঝা থেকে আপনি মুক্তি পাবেন। টুইন-রোটারি কমপ্রেসরে ৮-পোলের BLDC মোটর থাকার কারনে সাধারণ কমপ্রেসর এর তুলনায় কম বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে অপেক্ষাকৃত বেশী পরিমানের ঠাণ্ডা বাতাস প্রদানে সক্ষম। যার ফলে, ডুয়েল ইনভার্টার এসির তুলনায় ৬-১০% পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে সক্ষম।
দীর্ঘস্থায়িত্ব এই ধরনের এসির স্থায়িত্ব হয় সাধারণ ইনভার্টার এসির থেকেও কিছুটা বেশী। যেহেতু এতে টুইন-রোটারি কমপ্রেসর ব্যবহৃত হয় তাই কমপ্রেসর এর উপর চাপ কম থাকে যেটি এসির স্থায়িত্ব বৃদ্ধিতে কাজ করে। স্যামসাং ব্র্যান্ডের উদ্ভাবিত ডিজিটাল-ইনভার্টার কমপ্রেসরের মাধ্যমে তৈরি ট্রিপল-ইনভার্টার কমপ্রেসরের স্থায়িত্ব হচ্ছে প্রায় ২১ বছর যেটি জার্মান সার্টিফাইড অথোরিটি VDE (Verb and Detacher Elektrotechnicker) ১২০ দিন ধরে প্রায় ৩০০,০০০ বার পরীক্ষা করে সার্টিফিকেট প্রাপ্ত।
কম্পন এবং শব্দ টুইন-রোটারি কমপ্রেসরে বিদ্যমান শ্যাফট এর মধ্যে দুইটি ইম্পেলার থাকে যেটি শ্যফট এর দুইপাশে ১৮০ ডিগ্রীতে ঘুরতে থাকে। এতে করে ঘূর্ণয়ন এর চাপ সমভাবে শ্যাফট এর দুইপাশে বিদ্যমান থাকে এতে করে অতিরিক্ত চাপ থাকেনা যার কারনে শব্দও উৎপাদন করেনা। টুইন-রোটারি কমপ্রেসরে বিদ্যমান ৮-পোলের BLDC মোটর ব্যবহৃত হয় যেটিতে বিদ্যমান অতিরিক্ত ৪-পোল মূলত ঘূর্ণয়ন এর কারনে সৃষ্ট কম্পনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কাজ করে। এতে করে কমপ্রেসরে অতিরিক্ত কম্পন উৎপন্ন হয়না যার কারনে শীতলীকরণ কাজের সময় কমপ্রেসর থেকে কোনও শব্দের সৃষ্টি হয়না। যেটি ডুয়েল-ইনভার্টার প্রযুক্তির থেকে অপেক্ষাকৃত কম শব্দে কাজ পরিচালনা করতে সক্ষম।
মুল্য ডুয়েল-ইনভার্টার এসির মুল্য, সাধারণ ইনভার্টার এসির তুলনায় কিছুটা বেশী হলেও যদি এর কার্যকারিতা এবং স্থায়িত্ব বিবেচনা করেন তাহলে বলতে হবে এই বেশী মুল্য, ঠিকই আছে। অন্যদিকে, সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি ট্রিপল-ইনভার্টার এসির মুল্য অপেক্ষাকৃত বেশী। তবে আপনি যদি এই এসির কার্যকারিতার সাথে এর স্থায়িত্বর কথা চিন্তা করেন তাহলে আমা বলতেই পারি এটি “Value for Money”.

 

পরামর্শ

এতক্ষন পর্যন্ত ডুয়েল- ইনভার্টার এবং ট্রিপল-ইনভার্টার এসির পার্থক্যগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে নিজ রুমে ব্যবহার করার জন্য কোন ধরনের এসি আপনার জন্য উপযুক্ত? ইনভার্টার এসি ক্রয় করার পূর্বের নিচের বিষয়গুলো চিন্তা করে তারপর সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারেন। তবে একটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখবেন, ডুয়েল-ইনভার্টার এবং ট্রিপল-ইনভার্টার এসির মূল পার্থক্য হচ্ছে, এই এসিগুলোতে ব্যবহৃত কম্প্রেসরের মধ্যে

  • মনে রাখবেন, ডুয়েল এবং ট্রিপল- ইনভার্টার এই দুই ধরনের এসির বাজার মুল্য সাধারণ নন ইনভার্টার এসির তুলনায় ব্র্যান্ডভেদে প্রায় ৬০-৭০% পর্যন্ত এবং সাধারণ ইনভার্টার এসির তুলনায় প্রায় ২০-৩০% পর্যন্ত বেশী হতে পারে। তাই যদি এই ধরনের এসি আপনার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে তাহলে আরও কিছুটা বেশী মুল্যে ট্রিপল-ইনভার্টার এসি ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছি।
  • এই দুই ধরনের এসিই, সাধারণ এসির তুলনায় অধিক পরিমাণে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে সক্ষম যেখানে ট্রিপল -ইনভার্টার এসি প্রায় ৭০% পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারে। এতে বিদ্যমান টুইন-রোটারি কমপ্রেসর অপেক্ষাকৃত কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে রুমের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম তাই মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল নিতে চিন্তা করার প্রয়োজন হবেনা।
  • যদি রুমের তাপমাত্রা তাৎক্ষনিক ঠাণ্ডা করতে চান, তাহলে ট্রিপল-ইনভার্টার এসির বিকল্প কিছুই নেই। কেননা, সাধারণ রোটারি কমপ্রেসর এর তুলনায় এতে রয়েছে টুইন-রোটারি কমপ্রেসর যার মধ্যে বিদ্যমান ৮-পোলের ইলেকট্রিক মোটর যেটি অন্য প্রযুক্তির এসিগুলোর তুলনায় দ্বিগুণ শক্তিতে রুমের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বিখ্যাত কোরিয়ান ব্র্যান্ড Samsung এর দাবি তাদের ট্রিপল-ইনভার্টার এসি, নন-ইনভার্টার এসির তুলনায় ৬৫% দ্রুত রুমকে ঠাণ্ডা করতে পারে।
  • সাধারণ এসির কমপ্রেসর এর তুলনায় ডুয়েল-ইনভার্টার এবং ট্রিপল-ইনভার্টার কমপ্রেসর এর স্থায়িত্ব বেশী হয়ে থাকে। যেখানে ট্রিপল-ইনভার্টার প্রযুক্তির কম্প্রেসরের স্থায়িত্ব আরও বেশী থাকে কারন এই শীতলীকরণ প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল-ইনভার্টার কমপ্রেসরে ঘূর্ণয়ন এর ফলে অতিরিক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এতে অতিরিক্ত ৪-পোলের BLDC মোটর এর ব্যবহার হয়। এতে করে কমপ্রেসরে কম্পনের (Vibration) এর পরিমাণ থাকে অনেক কম যার কারনে কমপ্রেসর এর শক্তি হ্রাস পায়না যার ফলে এসির স্থায়িত্বও বৃদ্ধি পায়। স্যামসাং এর উদ্ভাবিত ট্রিপল-ইনভার্টার কমপ্রেসর এর স্থায়িত্ব হচ্ছে প্রায় ২১ বছর যেটি জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠান থেকে সার্টিফিকেট প্রাপ্ত।
  • দীর্ঘসময়ের জন্য যারা নিজ বাসা কিংবা অফিসে এসি ব্যবহার করতে আগ্রহী তাদের জন্য আমাদের পরামর্শ হচ্ছে ট্রিপল-ইনভার্টার এসি কেননা এই এসি বিদ্যুৎ শক্তি কম ব্যবহার করার সাথে সাথে অতিরিক্ত শব্দ উৎপাদনও করে না।
  • তবে মনে রাখবেন, ডুয়েল-ইনভার্টার এবং ট্রিপল-ইনভার্টার এসিতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশগুলো সহজলভ্য না হবার কারনে ভবিষ্যৎ রিপেয়ারিং এবং রক্ষণাবেক্ষণ এর জন্য অতিরিক্ত কিছু খরচের ধাক্কার জন্য আপনাকে সবসময়ই তৈরি থাকতে হবে।
বিঃদ্রঃ ট্রিপল ইনভার্টার এসিতে ব্যবহৃত ডিজিটাল-ইনভার্টার কমপ্রেসরকে ২০১৯ সালে কোরিয়ান ব্র্যান্ড স্যামসাং উদ্ভাবন করেছে এবং নিজেদের উৎপাদিত ফ্রিজ এবং এসির ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তির কমপ্রেসরের ব্যবহার ইতিমধ্যেই শুরু করেছে। যেহেতু ট্রিপল-ইনভার্টার প্রযুক্তিটি একদম নতুন তাই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এই প্রযুক্তির এসি কিংবা ফ্রিজ তেমন দেখা যায়না। তবে আশা করছি খুব শীঘ্রই এই প্রযুক্তিটি আমাদের দেশের সহজলভ্য হয়ে যাবে কেননা স্যামসাং এর উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তি ইতিমধ্যেই অন্যান্য বেশকিছু ব্র্যান্ড যেমন স্যানসুই , হায়ার ব্যবহার করে নিজেদের পন্য তৈরি করছে।

আশা করছি, আর্টিকেলটি আপনার ভাল লেগেছে। যদি এই আর্টিকেল সম্পর্কিত কোনও প্রশ্ন কিংবা মতামত জানাতে চান তাহলে অনুগ্রহ করে নিচের কমেন্ট সেকশনে সেটি জানাতে পারেন। আমরা চেষ্টা করবো আপনাকে সর্বাত্মক সহায়তা করার।

কমেন্ট সেকশন

Please enter your comment!
Please enter your name here