ইনভার্টার এবং ডুয়েল-ইনভার্টার এসির বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। জেনেছি এই দুই ধরনের এসির বিস্তারিত সুবিধা এবং অসুবিধা সম্পর্কেও। তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ব্যবহারকারী হিসাবে আপনার জন্য দুইটি মধ্যে কোন ধরনের এসি ভাল হবে?
প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য প্রথমে এই দুই ধরনের এসির কিছুটা পার্থক্য দেখে নেয়া যেতে পারে। তাই আজকের আর্টিকেল এর বিষয় হচ্ছে, ইনভার্টার এবং ডুয়েল-ইনভার্টার এসির মধ্যে পার্থক্যগুলো নিয়ে। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।
পরিচিতি
এই দুই ধরনের এসির মধ্যকার পার্থক্য জানার পূর্বে অবশ্যই নিচের আর্টিকেলগুলো রেফারেন্স হিসাবে পড়ে নিবেন। এতে করে বিভিন্ন ধরনের এসির কাজ করার প্রক্রিয়া এবং এগুলো ব্যবহারের সুবিধা-অসুবিধাগুল জানতে পারেন যার মাধ্যমে এই আর্টিকেল এর আলোচ্য পার্থক্যগুলো বুঝতে আপনার সুবিধা হবে।
- ইনভার্টার এসি কিভাবে কাজ করে? ব্যবহারের সুবিধাগুলো কি কি?
- নন-ইনভার্টার এসি কিভাবে কাজ করে? ব্যবহারের সুবিধাগুলো কি কি?
- ডুয়েল-ইনভার্টার এসি কিভাবে কাজ করে? ব্যবহারের সুবিধাগুলো কি কি?
এছাড়াও আমরা ইনভার্টার এবং নন-ইনভার্টার এসির মধ্যকার পার্থক্যও ইতিমধ্যেই আলচনা করেছি। এই আর্টিকেলটিও দেখে নেয়ার অনুরধ থাকছে।
“ইনভার্টার” আধুনিক প্রযুক্তির রেফ্রিজারেশনের কাজে ব্যবহৃত হলেও এরই একটি বিশেষায়িত রূপ হচ্ছে ডুয়েল-ইনভার্টার এসি।
এই দুই ধরনের এসিতেই বেশ কিছু কমন সুবিধা রয়েছে, যেমন বিদ্যুৎ সাশ্রয়, স্বল্প শব্দ উৎপাদন, দ্রুত গতিতে শীতলীকরণ ইত্যাদি। তবে এদের সবথেকে বড় পার্থক্য হচ্ছে, ব্যবহৃত কমপ্রেসর প্রযুক্তিতে। সাধারণ ইনভার্টার এসিতে যেখানে সিঙ্গেল-রোটারি কমপ্রেসর ব্যবহৃত হয় সেখানে ডুয়েল-ইনভার্টার প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত হয় টুইন-রোটারি কমপ্রেসর যেটি ইনভার্টার এসিতে থেকেও অপেক্ষাকৃত কম বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে দ্রুত গতিতে কাজ করতে সক্ষম।
পার্থক্যসমূহ একনজরে
নিচে টেবিল আকারে আমরা পার্থক্যগুলো দেখানোর চেষ্টা করেছি যার বিস্তারিত আমরা আর্টিকেলে আলোচনা করবো। বোঝার সুবিধার জন্য অনুগ্রহ করে ভাল করে দেখে নিন।
ইনভার্টার এসি | ডুয়েল-ইনভার্টার এসি | |
কমপ্রেসর | এই এসিতে ব্যবহৃত হয় সিঙ্গেল-রোটারি কমপ্রেসর যেটি নন-ইনভার্টার এসির তুলনায় অনেকবেশী বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। | এই এসিতে ব্যবহৃত হয় টুইন-রোটারি কমপ্রেসর যেটিতে দুইটি ইম্পেলার থাকে যার কারনে অতিরিক্ত দ্রুত সময়ে রুমে ঠাণ্ডা করতে পারে। সেই সাথে ইনভার্টার এসির তুলনায় কম বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে। |
শীতলীকরণ শক্তি | ইনভার্টার কমপ্রেসরে ব্যবহৃত হয় ব্রাশলেস ডিসি কারেন্ট মোটর (BLDC) যেটি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ঘূর্ণয়ন গতি কমাতে কিংবা বাড়াতে পারে। এক কথায়, যখন প্রয়োজন তখন এই ঘূর্ণয়ন এর পরিমাণ বেশী হয় অন্যদিকে, প্রয়োজন না হলে মোটর বন্ধ না হয়ে অপেক্ষাকৃত কম গতিতে ঘূর্ণয়ন এর কাজ করতে থাকে। | এই এসিতে আরও এডভান্স BLDC মোটর ব্যবহৃত হয় যেটি প্রয়োজনের সময় অতিরিক্ত ঘূর্ণয়ন শক্তি গ্রহন করতে পারে এবং একই পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমে দুইটি ইম্পেলার অপেক্ষাকৃত দ্রুততার সাথে রুমের তাপমাত্রা ঠাণ্ডা করতে সক্ষম। |
বিদ্যুৎ শক্তির ব্যবহার | সিঙ্গেল-রোটারি কমপ্রেসর সাধারণ রেসিপ্রোকেটিং কমপ্রেসর থেকেও বেশী পরিমাণ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী তবে এর কার্যকারিতা টুইন-রোটারি কমপ্রেসর এসির তুলনায় কিছুটা কম। | টুইন-রোটারি কমপ্রেসরে দুইটি ইম্পেলার থাকার কারনে সাধারণ কমপ্রেসর এর তুলনায় কম বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে একই পরিমানের ঠাণ্ডা বাতাস প্রদানে সক্ষম। যার ফলে, বিদ্যুৎ বিল এর বোঝা থেকে আপনি মুক্তি পাবেন। |
দীর্ঘস্থায়িত্ব | সাধারণ ইনভার্টার এসির স্থায়িত্ব হয় প্রায় ১০-১২ বছর পর্যন্ত। | এই ধরনের এসির স্থায়িত্ব হয় সাধারণ ইনভার্টার এসির থেকেও কিছুটা বেশী। যেহেতু এতে টুইন-রোটারি কমপ্রেসর ব্যবহৃত হয় তাই কমপ্রেসর এর উপর চাপ কম থাকে যেটি এসির স্থায়িত্ব বৃদ্ধিতে কাজ করে। |
কম্পন এবং শব্দ | এই ধরনের এসির কমপ্রেসরে একটি শ্যাফট এবং একটি মাত্র ইম্পেলার থাকে যেটি ক্রমান্বয়ে ঘূর্ণয়ন এর মধ্যে থাকে। যখন মোটর এর ঘূর্ণয়ন এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তখন শ্যাফটের উপর অতিরিক্ত চাপ পরে যার কারনে কম্পনের উৎপত্তি হয় যা অতিরিক্ত শব্দের উৎপাদন করে। শব্দের পরিমাণ বেশী হলে সেটি আপনার জন্য বিরক্তির কারনও হতে পারে। | টুইন-রোটারি কমপ্রেসরে বিদ্যমান শ্যাফট এর মধ্যে দুইটি ইম্পেলার থাকে যেটি শ্যফট এর দুইপাশে ১৮০ ডিগ্রীতে ঘুরতে থাকে। এতে করে ঘূর্ণয়ন এর চাপ সমভাবে শ্যাফট এর দুইপাশে বিদ্যমান থাকে এতে করে অতিরিক্ত চাপ থাকেনা যার কারনে শব্দও উৎপাদন করেনা। |
মুল্য | ব্র্যান্ডভেদে ইনভার্টার এসির মুল্য তুলনামূলকভাবে ডুয়েল-ইনভার্টার এসির থেকে কিছুটা কম। | অন্যদিকে, ডুয়েল-ইনভার্টার এসির মুল্য কিছুটা বেশী হলেও যদি এর কার্যকারিতা এবং স্থায়িত্ব বিবেচনা করেন তাহলে বলতে হবে এই বেশী মুল্য, ঠিকই আছে। |
পরামর্শ
এতক্ষন পর্যন্ত ইনভার্টার এবং নন-ইনভার্টার এসির কমপ্রেসর (ইনভার্টার এবং ডুয়েল-ইনভার্টার এসির) এর পার্থক্যগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে নিজ রুমে ব্যবহার করার জন্য কোন ধরনের এসি আপনার জন্য উপযুক্ত? ইনভার্টার এসি ক্রয় করার পূর্বের নিচের বিষয়গুলো চিন্তা করে তারপর সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারেন। তবে একটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখবেন, ইনভার্টার এবং ডুয়েল-ইনভার্টার এসির মূল পার্থক্য হচ্ছে, এই এসিগুলোতে ব্যবহৃত কম্প্রেসরের মধ্যে।
- মনে রাখবেন, ইনভার্ট এবং ডুয়েল-ইনভার্টার এই দুই ধরনের এসির বাজার মুল্য সাধারণ নন ইনভার্টার এসির তুলনায় ব্র্যান্ডভেদে প্রায় ৫০-৭০% পর্যন্ত বেশী। তাই যদি এই ধরনের এসি আপনার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে তাহলে আরও কিছুটা বেশী মুল্যে ডুয়েল-ইনভার্টার এসি ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছি।
- এই দুই ধরনের এসিই সাধারণ এসির তুলনায় অধিক পরিমাণে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে সক্ষম যেখানে ডুয়েল-ইনভার্টার এসি প্রায় ৭০% পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারে। এতে বিদ্যমান টুইন-রোটারি কমপ্রেসর অপেক্ষাকৃত কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে রুমের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম তাই মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল নিতে চিন্তা করার প্রয়োজন হবেনা।
- যদি রুমের তাপমাত্রা তাৎক্ষনিক ঠাণ্ডা করতে চান, তাহলে ডুয়েল-ইনভার্টার এসির বিকল্প কিছুই নেই। কেননা, সাধারণ রোটারি কমপ্রেসর এর তুলনায় এতে রয়েছে টুইন-রোটারি কমপ্রেসর যার মধ্যে বিদ্যমান টুইন ইম্পেলার একই সময়ে দ্বিগুণ শক্তিতে রুমের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বিখ্যাত কোরিয়ান ব্র্যান্ড LG এর দাবি তাদের ডুয়েল-ইনভার্টার এসি, নন-ইনভার্টার এসির তুলনায় ৪০% দ্রুত রুমকে ঠাণ্ডা করতে পারে।
- সাধারণ এসির কমপ্রেসর এর তুলনায় ইনভার্টার এবং ডুয়েল-ইনভার্টার কমপ্রেসর এর স্থায়িত্ব বেশী হয়ে থাকে। যেখানে ডুয়েল-ইনভার্টার প্রযুক্তির কম্প্রেসরের স্থায়িত্ব আরও কিছুটা বেশী থাকে কারন এই শীতলীকরণ প্রক্রিয়ায় ডুয়েল-ইনভার্টার কমপ্রেসরে ঘূর্ণয়ন এর ফলে অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি হয়না। এতে করে কমপ্রেসরে কম্পনের (Vibration) এর পরিমাণ থাকে অনেক কম যার কারনে কমপ্রেসর এর শক্তি হ্রাস পায়না যার ফলে এসির স্থায়িত্বও বৃদ্ধি পায়।
- দীর্ঘসময়ের জন্য যারা নিজ বাসা কিংবা অফিসে এসি ব্যবহার করতে আগ্রহী তাদের জন্য আমাদের পরামর্শ হচ্ছে ডুয়েল-ইনভার্টার এসি, কেননা এই এসি বিদ্যুৎ শক্তি কম ব্যবহার করার সাথে সাথে অতিরিক্ত শব্দ উৎপাদনও করেনা।
- তবে মনে রাখবেন, ইনভার্টার এবং ডুয়েল-ইনভার্টার এসিতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশগুলো সহজলভ্য না হবার কারনে ভবিষ্যৎ রিপেয়ারিং এবং রক্ষণাবেক্ষণ এর জন্য অতিরিক্ত কিছু খরচের ধাক্কার জন্য আপনাকে সবসময়ই তৈরি থাকতে হবে।
আশা করছি, আর্টিকেলটি আপনার ভাল লেগেছে। যদি এই আর্টিকেল সম্পর্কিত কোনও প্রশ্ন কিংবা মতামত জানাতে চান তাহলে অনুগ্রহ করে নিচের কমেন্ট সেকশনে সেটি জানাতে পারেন। আমরা চেষ্টা করবো আপনাকে সর্বাত্মক সহায়তা করার।