R22 এবং R410A গ্যাস এর মধ্যকার পার্থক্য কি?

0
1410
R22 এবং R410A গ্যাস

যেকোনো ধরনের শীতলীকরণ (Cooling) যন্ত্র যেমন, ফ্রিজ এবং এসি (AC) কাজ করার জন্য বিশেষ একধরনের গ্যাস ব্যবহার করে থাকে। এই গ্যাসকে বলা হয় রেফ্রিজারেন্ট (Refrigerant) যার মুল কাজ হচ্ছে যন্ত্রের মধ্যে বিদ্যমান কম্প্রেসর এর মধ্যে তাপ পরিবহন করে একটি নির্দিষ্ট জায়গা কিংবা স্থানকে ঠাণ্ডা করে রাখা।

Refrigerant (গ্যাস) কি?

তাত্তিক অর্থে “শীতলকারক এজেন্ট অথবা রেফ্রিজারেন্ট  মুলত হচ্ছে এক গ্যাস যা অতিমাত্রায় চাপ প্রয়োগ করার কারনে বিশেষ এক ধরনের তরল পদার্থে রূপান্তরিত হয়ে, একটি নির্দিষ্ট স্থানের তাপকে অন্যত্র স্থানান্তর করার কাজে ব্যবহৃত হয়।

সাধারণত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যেসকল যন্ত্র (Device) রয়েছে, সগুলোতে এই রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহৃত হয়ে থাকে যা মুলত “গ্যাস” হিসাবে সবথেকে বেশী পরিচিত। আমরা বাসা কিংবা অফিসে যেই সকল ফ্রিজ এবং এসি ব্যবহার করে থাকে, সেগুলোতে বিদ্যমান কম্প্রেসরে এই গ্যাস বিদ্যমান থাকে।

এই গ্যাসের মুল কাজ হচ্ছে, একটি নির্দিষ্ট স্থানের বাতাস থেকে গরম তাপকে শোষণ করে সেখানে অধিকতর ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহ করা যাতে করে, সেই স্থানটির তাপমাত্রা কমে আসে।

আপনি ব্যবহার করার জন্য যখন ফ্রিজ কিংবা এসি কিনবেন, তখন দেখবেন সেটি প্যাকেজিং কিংবা ডিভাইসটির আগে R22 কিংবা R410A এই ধরনের একটি স্ক্রিকার কিংবা লিখা থাকবে। যা মুলত ডিভাইসটির কম্প্রেসরে ঠিক কোন ধরনের গ্যাস ব্যবহৃত হয়েছে সেটির তথ্য প্রদান করে।

পারতপক্ষে এই দুইটি গ্যাসই শীতলীকরণ কাজে ব্যবহার হলেও, গ্যাস দুইটির মধ্যে বেশকিছু পার্থক্য বিদ্যমান থাকে। আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা এই পার্থক্যগুলো নিয়ে আলোচনা করবো যাতে করে বুঝতে পারবেন, এই দুইটি গ্যাসের মধ্যে কোনটি ভালো।

R22 Refrigerant (গ্যাস)

সহজ কথায় এটি হচ্ছে প্রযুক্তির শুরু দিকে ব্যবহৃত এক ধরনের রিফ্রিজারেন্ট যা মুলত এখন আর তেমন ব্যবহৃত হয় না। ২০১০ সালের আগের শীতলীকরণ ডিভাইসগুলোতে এই ধরনের গ্যাস ব্যবহৃত হলে ও পরবর্তীতে পশ্চিমা দেশগুলোতে এই গ্যাসের ব্যবহার প্রায় নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। যদিও আমাদের দেশের যেকোনো ফ্রিজ এবং এসি পাওয়া যায়, সেগুলোর কিছু কিছু মডেলে এই ধরনের গ্যাসের ব্যবহার এখন ও হয়ে আসছে।

  • R22 রিফ্রিজারেন্টকে Freon® (ফ্রেয়ন) হিসাবে ও চিহ্নিত করা হয়।
  • এটি মুলত এক ধরনের hydro-chlorofluorocarbon (HCFC) যা পরিবেশের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকারক।
  • ২০১০ সাল থেকে সকল ধরনের এসি ডিভাইসে এই গ্যাস ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় এবং ২০২০ সাল থেকে এই গ্যাসের সকল ধরনের আমদানি, উৎপাদন এবন বিপণন করার ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলো নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে।

R410A Refrigerant (গ্যাস)

এখন আমরা সবকিছুতেই পরিবেশ বান্ধব (Eco-Friendly) বিষয়টিতে প্রধান্য দেই। রেফ্রিজারেন্ট গ্যাসও এর ব্যাতিক্রম নয়। এটি হচ্ছে মুলত আধুনিক প্রযুক্তির রেফ্রিজারেন্ট যা মুলত সকল ধরনের ফ্রিজ এবং এসি ইউনিটে মুলত ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

তবে এই রেফ্রিজারেন্ট মুলত প্রথম আবিষ্কার হয় ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান Allied Signal এর মাধ্যমে। ২০১০ এর আগে পর্যন্ত প্রায় সকল ধরনের শীতাতপ যন্ত্রে R22 রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহৃত হলেও ২০১০ সালে USA, JAPAN এবং EU মুলত এই গৃহস্থালি সকল ধরনের শীতাতপ যন্ত্রে শুধুমাত্র এই R410A রিফ্রিজারেন্টকে ব্যবহার করার অনুমোদন প্রদান করে এবং সেই সময় থেকেই R22 রেফ্রিজারেন্টকে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়।

R22 গ্যাসটির সাথে এটির মুল পার্থক্য হচ্ছে, R410A অধিক দ্রুততার সাথে তাপ পরিবহন করতে পারে এবং এই গ্যাসের তাপ শোষণ করার ক্ষমতা ও অনেকবেশী। সেই সাথে R410A গ্যাস পরিবেশের জন্য ও কিছুটা সহনশীল।

  • R410A রিফ্রিজারেন্টকে Freon® (পিউরন) নামে ও চিহ্নিত করা হয়।
  • ২০১০ সাল থেকে সকল ধরনের গৃহস্থালি রেফ্রিজারেশন ডিভাইসে (ফ্রিজ, এসি) এই গ্যাসের ব্যবহার শুরু হয়।
  • এটি মুলত hydro-fluorocarbon (HFC) এর মাধ্যমে গঠিত উপাদান যা পরিবেশের জন্য তেমন ক্ষতিকারক নয়।
  • ২০১৫ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলোতে এই গ্যাসের ব্যবহার বাধ্যতামূলক হয়ে যায়।

পার্থক্য

R22 এবং R410A এই দুই ধরনের রেফ্রিজারেন্টের মধ্যকার কিছু পার্থক্য উপস্থাপন করছি।

বৈশিষ্ট্য রেফ্রিজারেন্ট টাইপ
R22 R410A
তাপ শোষণ ক্ষমতা কম বেশী
কমপ্রেসর এর স্থায়িত্ব কম বেশী
কুলিং প্রেসার সহ্য করার ক্ষমতা কম বেশী
কমপ্রেসর এর কার্যক্ষমতা কম বেশী
পরিবেশগত ক্ষতি বেশী কম

আধুনিক মডেল এবং ব্র্যান্ডের সকল রেফিরেজারেশন ডিভাইসেই এখন মুলত এই R410A রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাই আমাদের পরামর্শ থাকবে, আপনি যদি নতুন কোনও রেফ্রিজারেশন ডিভাইস (ফ্রিজ কিংবা এসি) ক্রয় করেন তাহলে অবশ্যই দেখে নিবেন সেটিতে বিদ্যমান গ্যাসটি R410A যুক্ত কিনা।

কেননা, এই ধরনের গ্যাসকে একই সাথে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ, আপনার ডিভাইস যদি R22 যুক্ত হয়ে থাকে, তাহলে আপনি কোনওভাবেই সেটির মধ্যে R410A রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করতে পারবেন না। অর্থাৎ, গ্যাসের মান অনুসারে রেফ্রিজারেশন ডাইভাইসগুলোকে তৈরি করা হয়ে থাকে।

ড্রাই চার্জ

২০১০ সালে নতুন করে উৎপাদিত সকল রেফ্রিজারেশন ডিভাইসে R22 রেফরিজারেন্ট ব্যবহার করা নিষিদ্ধ হলেও কিছু প্রতিষ্ঠান ভিন্ন মাধ্যমে এই ধরনের কমপ্রেসর উৎপাদন করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে যাকে বলা হয় “ড্রাই চার্জ“।

এই প্রক্রিয়ায় কোনও ধরনের রেফ্রিজারেন্ট কিংবা গ্যাস ছাড়াই কমপ্রেসর উৎপাদন করা হয় এবং এরপর বাড়িতে টেকনিশিয়ান এসে ওই ইউনিটগুলোতে R22 গ্যাস পূর্ণ করে দেয়ার কাজটি করে থাকে। এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণরুপে অবৈধ এবং আপনার জন্যও আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

  • যেহেতু বিশ্বব্যাপি এই R-22 গ্যাসের উৎপাদন প্রায় বন্ধের পথে, তাই ভবিষ্যতে এই গ্যাসে পরিচালিত ডিভাইসগুলোতে গ্যাস রিফিল কিংবা রিচার্জ করার খরচ অনেক বৃদ্ধি পাবে।
  • অন্যদিকে, R-410A বিদ্যমান ডিভাইসগুলো অধিকতর আধুনিক, নির্ভরযোগ্য এবং কিছুটা হলেও পরিবেশ বান্ধব।
  • R22 রেফরিজারেন্ট রয়েছে এমন ডিভাইসগুলোতে আপনি বিক্রয়ত্তর সেবা (warranty) খুব কম পাবেন কেননা এই গ্যাসযুক্ত কমপ্রেসরগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয়না।

R22 এর সরবরাহ কমছে ক্রমাগত যার কারনে এর দাম ও বেড়ে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যৎ এ এইটা পাওয়া ও কঠিন হবে। পিউরন বা R410A হচ্ছে পরিবেশবান্ধব গ্যাস যা কিনা অনেক দক্ষ এবং কার্যকরী । এই পিউরন  ক্রেতার খরচ ও কমাতে সাহায্য করে। ড্রাই চার্জিং ইউনিট অথবা  R22 এর  ওয়ারেন্ট খুব বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তাই আমাদের পরামর্শ থাকবে, নতুন ডিভাইস ক্রয় করার ক্ষেত্রে R410A যুক্ত ডিভাইস ক্রয় করবেন।

এছাড়াও, এসি সম্পর্কিত কোনও জিজ্ঞাসা থাকলে যোগাযোগ করতে পারেন, সেবক টীম এর সাপোর্ট হটলাইন নাম্বার – (+88) 01400414703-04 কিংবা ইমেইল এর মাধ্যমেও জানাতে পারেন – info@sebokbd.com

আশা করছি, আর্টিকেলটি আপনার ভাল লেগেছে। যদি এই আর্টিকেল সম্পর্কিত কোনও প্রশ্ন কিংবা মতামত জানাতে চান তাহলে অনুগ্রহ করে নিচের কমেন্ট সেকশনে সেটি জানাতে পারেন। আমরা চেষ্টা করবো আপনাকে সর্বাত্মক সহায়তা করার।

কমেন্ট সেকশন

Please enter your comment!
Please enter your name here