এসি ঠান্ডা না হবার কারণ সমূহ

রিমোট ভুলভাবে সেট করা হয়েছে: যদি দেখেন এসি সম্পূর্ণরূপে চালু আছে কিন্তু তারপরও রুমের তাপমাত্রা কমছে না তাহলে সর্বপ্রথম আপনাকে এসির রিমোটের সেটিংস চেক করে নিতে হবে। এর জন্য প্রথমে এসির রিমোট চেক করে নিন এবং নিশ্চিত হোন সেটি “Cool” মোডে সেট করা রয়েছে। যদি রিমোটের মোড “Cool” হিসাবে সেট করা থাকে তাহলে অনুগ্রহ করে সেটির তাপমাত্রার রিডিংটি চেক করে দেখে নিন।

অনেকসময়ই দেখা যায়, চাপ লেগে কুলিং মোডটি পরিবর্তিত হয়ে “Auto” কিংবা “Warm” কিংবা “Heat” কিংবা “Fan” (রিমোটে বিদ্যমান বাটনের গায়ে লিখা দেখতে পাবেন) মোডে চলে আসে। যদি এরকম হয়ে থাকে অনুগ্রহ করে সেটি পরিবর্তন করে “Cool” মোড নির্বাচন করে নিন। সবকিছু সঠিক নিয়মে নির্বাচন করার পর এসিটি চালু করুন এবং কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখুন এসি ঠাণ্ডা বাতাস প্রদান করতে পারে কিনা। যদি ঠাণ্ডা বাতাস আসতে থাকে তাহলেই সমস্যার সমাধান হয়ে গেল।

যদি সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে পরবর্তী ধাপ অনুসরন করুন। এই ধাপে আপনাকে এসিতে বিদ্যমান এয়ার-ফিল্টারগুলো চেক করে দেখে নিতে হবে।

ধূলা-ময়লা যুক্ত এয়ার ফিল্টার: এসির ইনডোর ইউনিট (যেটি রুমের মধ্যে থাকে) এর মধ্যে বেশকিছু এয়ার ফিল্টার থাকে। এই ফিল্টারগুলোর রুমের মধ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের ধূলা-ময়লার ক্ষুদ্রাকৃতির পার্টিকেলগুলোকে শুষে নেয় যাতে করে রুমের মধ্যে পরিষ্কার বাতাস প্রবাহিত করা সম্ভব হয়। এই কাজের মাধ্যমে এসির ফিল্টারগুলো অনেক বেশী পরিমাণ ধূলা-ময়লা জমতে থাকে। যদি সঠিকভাবে এই এয়ার ফিল্টারগুলোকে পরিষ্কার করা না হয় তাহলে এসি থেকে বাতাসের প্রবাহকে এটি ব্লক করতে পারে যার কারনে রুমের ঠাণ্ডা বাতাসের প্রবাহ কমে আসতে পারে। অনেক সময় এটির কারনে এসির কুলিং সিস্টেমটি সম্পূর্ণরূপে বন্ধও হয়ে যেতে পারে।

এসির রিমোট চেক করার পরও যদি ঠাণ্ডা বাতাসের প্রবাহ না থাকে, অনুগ্রহ করে এবার এয়ার ফিল্টারগুলোকে চেক করুন। এসির পাওয়ার সুইচ বন্ধ করে ইনডোর ইউনিট থেকে ফিল্টারগুলোকে বের করুন এবং চেক করে দেখুন সেগুলোতে ধূলা-ময়লা রয়েছে কিনা। ফিল্টারগুলোকে পরিষ্কার করুন এবং তারপর সেটিকে পুনরায় এসিতে ইন্সটল করে নিন। এবার এসি চালু করুন এবং অপেক্ষা করে দেখুন রুমের তাপমাত্রা ঠাণ্ডা হচ্ছে কিনা। যদি দেখেন এসি এবার রুমের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে তাহলে সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। অন্যথায়, এবার সময় হয়েছে জটিল সমস্যাগুলোকে খুঁজে দেখার।

কন্ডেনসার/ইভাপোরেটর কয়েল ব্লক হয়ে যাওয়া: আপনারা ইতিমধ্যেই জানেন, বাসা কিংবা অফিসে আমরা যেধরনের এসি ব্যবহার করি সেটিতে দুইটি মুল অংশ থাকে। একটি রুমের মধ্যে বসানো থাকে (ইনডোর ইউনিট) এবং অন্যটি রুমের বাইরে (আউটডোর ইউনিট) । এই ইনডোর এবং আউটডোর ইউনিটের মধ্যে দুটি কয়েল থাকে যেগুলো মূলত স্টিলের তৈরি জাল এর মতন দেখতে।

যদি এসি চালু থাকে কিন্তু ঠাণ্ডা বাতাস প্রদান না করে তাহলে এর একটি কারণ হচ্ছে পারে এই কয়েলগুলো ব্লক হয়ে থাকা। যখন এসি সঠিকভাবে কাজ করে তখন ইনডোর – আউটডোর ইউনিটের মধ্যে অবস্থিত ফ্যান, কয়েলগুলোর মধ্যে বাতাস প্রবাহ করতে থাকে যাতে করে রুমের মধ্যে শীতলতা অনুভূত হয়। অতিরিক্ত ধূলা-ময়লা, ফাঙ্গাস এই কয়েলগুলোতে জমে ফ্যানের বাতাস প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, ফলে ফ্যানের কার্যকারিতা হ্রাস পায়। এছাড়াও, কয়েলগুলোর মধ্যে বেশী ময়লা জেমে গেলে সেটির কারনে এসি ঠাণ্ডা করণ প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত বিদ্যুৎ শক্তিও ব্যবহার করে। এতে করে, কম্প্রেসর অতিরিক্ত কাজ করতে থাকে যার ফলে কম্প্রেসরের কার্যকারিতা হ্রাস পায় এমনকি এসির বড় আকারের ক্ষতিও হতে পারে।

এসির ইনডোর ইউনিটটি আপনি চাইলে নিজেই ভ্যাকিউমিং কিংবা ব্রাশ ব্যবহার করে পরিস্কার করতে পারবেন।আর যদি আউটডোর ইউনিটটি আপনার হাতে কাছে থাকে তাহলে আপনি চাইলে ভ্যাকিউমিং, পানি কিংবা ব্রাশ ব্যবহার করার মাধ্যমে কয়েল থেকে ময়লা সরিয়ে ফেলতে পারেন ।

এরপরও যদি এসি ঠাণ্ডা বাতাস প্রদান করতে না পারে তাহলে এখন সময় হয়েছে অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান এর সাথে যোগাযোগ করার।

টিপ্সঃ আপনি চাইলে সেবক টীম এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এদের অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান রয়েছে যারা এসি ইন্সটলেশন থেকে শুরু করে নিয়মিত এসি সার্ভিসিং কিংবা এসি সম্পর্কিত কোনও সেবা প্রদান করার জন্য সর্বদাই রয়েছে আপনার জন্য। এছাড়াও, এসি সম্পর্কিত কোনও জিজ্ঞাসা থাকলে যোগাযোগ করতে পারেন, সেবক টীম এর সাপোর্ট হটলাইন নাম্বার – (+88) 01400414703-04 কিংবা ইমেইল এর মাধ্যমেও জানাতে পারেন – info@sebokbd.com

রেফ্রিজারেন্ট লিকেজ: এসির ঠাণ্ডাকরণ প্রক্রিয়া রেফ্রিজারেন্ট কুলিং এজেন্ট হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে যেটি আমাদের কাছে “এসির গ্যাস” নামে পরচিতি। এই গ্যাস এসির ইনডোর এবং আউটডোর ইউনিটের সাথে যুক্ত কপার পাইপের মাধ্যমে প্রবাহিত হতে থাকে। অনেকসময় এই কপার পাইপের মধ্যে লিকেজ কিংবা ছিদ্র হতে পারে যার ফলে এসির ঠাণ্ডা বাতাসের পরিমান ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

এমনও হতে পারে, এসি ঠাণ্ডা বাতাস প্রদান করছে ঠিকই কিন্তু যেই অনুপাতে সেটি প্রদান করা কথা সেই অনুপাতে প্রদান করতে সক্ষম হচ্ছে না। এভাবে দীর্ঘমেয়াদে এসি ব্যবহার করার ফলে কম্প্রেসর এর উপর অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি হয় যার কারনে এসির বড় আকারের ক্ষতিও হতে পারে এমনকি বড় আকারের দুর্ঘটনাও হতে পারে।

এই সমস্যা সমাধানের জন্য অবশ্যই রেফ্রিজারেন্ট কিংবা গ্যাস এর লেভেল সঠিকভাবে চেক করতে হবে যেটি ব্যবহারকারী হিসাবে আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং, অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানের পরামর্শ গ্রহন করুন।

কম্প্রেসরে বিদ্যমান ত্রুটি: “কম্প্রেসর” এসির হৃদপিণ্ড কিংবা হার্ট হিসাবে বিবেচিত হয় কেননা এসি যে প্রক্রিয়ার শীতলীকরণ কার্যাদি সম্পাদন করে সেটির মধ্যে কম্প্রেসর এর গুরুত্ব সবথেকে বেশী। যদি কোনও কারণে এসিতে বিদ্যমান এই কম্প্রেসর সঠিকভাবে কাজ করতে না পারে কিংবা যদি কম্প্রেসরে কোনও ধরনের ত্রুটি দেখা যায় তাহলে, এসি রুমের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

এরকম সমস্যা সমাধান করার জন্য অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে কেননা ব্যবহারকারী হিসাবে আপনার পক্ষে এসির কম্প্রেসর পরিবর্তন করা জটিল এবং কষ্টসাধ্য কাজ।

এসির বৈদুতিক অংশের বিদ্যমান ত্রুটি: এয়ার কন্ডিশনার সিস্টেমের বৈদুতিক অংশে রয়েছে কম্প্রেসর, ইনডোর সার্কিট, আউটডোর সার্কিট (ইনভার্টার এসি কিংবা কিছু কিছু এসির আউটডোর ইউনিটে ব্যবহৃত হয়), ইনডোর – আউটডোর ফ্যান, ক্যাপাসিটর, ম্যাগনেটিক কন্টাকটর, পাওয়ার ক্যাবেল প্রভৃতি। পূর্বে কম্প্রেসরের ত্রুটি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তাছাড়া যদি কোনও কারণে এসিতে বিদ্যমান বৈদ্যুতিক অংশে কোনও ধরনের ত্রুটি দেখা যায় তাহলে, এসি রুমের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।

এরকম সমস্যা সমাধান করার জন্য অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে কেননা ব্যবহারকারী হিসাবে আপনার পক্ষে এসির বৈদ্যুতিক ত্রুটি নির্ণয় করা সম্ভব নয়।

সঠিক টনের এসি ব্যবহার না করা: এসি ভালো রাখার এবং এটি থেকে দীর্ঘমেয়াদে সেবা পাবার জন্য অবশ্যই সঠিক আকারের এসি ব্যবহার করতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে এসির এই মান নির্ণয় BTUh (British Thermal Units per hour) নামে পরিচিত যেটির অর্থ হচ্ছে প্রতি ঘণ্টা হিসাবে এসি কি পরিমানের গরম বাতাসকে শীতলীকরণ করতে সক্ষম।

আমরা অনেক সময়ই নিজেদের রুমের জন্য ইচ্ছামতন আকারের (টনের ভিত্তিতে) এসি ব্যবহার করতে শুরু করি কিন্তু এটি আপনার এসির জন্য হুমকিস্বরূপ। সাধারণ অবস্থায় আপনি বুঝতে পারবেন না এসি ঠিক মতন কাজ করছে কিনা কিন্তু অত্যাধিক গরমের সময় যদি রুমের আয়তন অনুযায়ী এসির আকার (টন) কম হয় তাহলে সেটি সম্পূর্ণরূপে রুমের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।

ব্যবহারকারী হিসাবে সঠিক টন নির্বাচন করা কষ্টসাধ্য কাজ কেননা এটি পরিমাপ করতে হলে বেশ কিছু বিষয় ভালো করে ক্যালকুলেট করে নিতে হয়। এই ক্যালকুলেশন সম্পর্কে কিছুটা ধারনা প্রদান করার জন্য অনুগ্রহ করে “এসির টনের হিসাবে এবং সঠিক টন নির্বাচন পদ্ধতি” আর্টিকেলটি ভালো করে পড়ে নিতে পারে।

এখন আপনার এসি যদি রুমের হিসাবে সঠিক মাপের না হয় তাহলে এসির পক্ষে রুমের তাপমাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবেনা। ফলশ্রুতিতে এসি পর্যাপ্ত পরিমাণ ঠাণ্ডা বাতাস প্রদান করতে পারবে না।